Searching my own sky

Searching my own sky

Saturday, November 19, 2011

ফালতু

            স্কুল এর Happy fest এর জন্য তখন ভীষণ ব্যস্ত আমি। ক্লাস এ ওদের কিছু লিখতে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে নিজের বাকি কাজগুলো করতে থাকি। না হলে সে দিন ও বাড়ি ফিরতে রাত হত।
              কিছুক্ষণ পরে দেখি সে আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। একেবারে চুপচাপ । "চুপচাপ" শব্দটা ঠিক তার ওপর  মানায়না। সারাক্ষণ ওর চিৎকার আর দুষ্টুমি , আর কিছু অযৌক্তিক বোকা বোকা কথা আর কাজ। সব জিনিসের একটা বোকা বোকা অবান্তর যুক্তি থাকে তার। জানিনা কোন জগতে থাকে। তবে তার একটা আলাদা জগৎ  তো রয়েইছে। সবাই ওকে নিয়ে মজা করে। সবচেয়ে বেশি বকা সেই খায়।  সায়ন্তিকে খুব ভালবাসে । কেও ওর সাথে সাধারণত  বন্ধুত্ত করতেও চায়না ।হয়তো তার কিছু অযৌক্তিক কথাবার্তা বা উটকো স্বভাবের জন্যে।
             আমি জিজ্ঞেস করি , "লেখা শেষ হয়েছে আয়েশা ?" সে তখনও চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। তাকিয়ে দেখি ও  কাঁদছে । কি  হল? সে কেঁদেই চলেছে। আমাদের স্কুল হেড আমার কাজ দেখতে এসেছিলেন তাকে কাঁদতে দেখে উনি বলে উঠলেন , "Don't you know that tears make you weak? Now stop crying and go your class, young lady!" কিন্তু একটা বছর ৯ বা ১০ এর মেয়েকে সেই কথাগুলি যে খুব একটা প্রভাবিত করলনা সে টা স্পষ্ট বোঝা গেল। তার কান্না থামলোনা । একটা বাচ্চাকে কিছু বোঝাবার জন্য বাচ্চাই হতে হয় । তাই আমিও ওর ভাষাতেই জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু আজ কোনোভাবেই যেন তাকে থামানো যাচ্ছেনা।
              ক্লাস এ এসে  জিজ্ঞেস করি, "কি  হয়েছে? ও কাঁদছে কেন?" তখন কেও কিছু না বললেও পরে পুরো ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়।


            সায়ন্তি হল মূল কারণ। এক সময় দুই জনে ভাল বন্ধু ছিল। Best Friends. আজ সায়ন্তি আর ওর দিকে ফিরেও তাকায়না। সে "সোমদত্তা" "পারমিতা" দের মত বন্ধুদের পেয়ে গেছে। আজ আয়েশা টিফিনে ওর পছন্দের লাঞ্চ নিয়ে আসলে সে খায়না। বলে , "ও সব আমি খাইনা! " আয়েশা ভীষণ ভাল ছবি আঁকে । competition এ ফাস্ট প্রাইজ জিতে সায়ন্তিকে দেখাতে আসলে সে কিছু না বলে চলে যায় । সে দিন সে কাঁদছিল কারণ , আবার সায়ন্তির সাথে কথা বলতে গেলে সোমদত্তা তাকে বলে , "আমরা তোর মত আলতু ফালতু লোকেদের সাথে মিশিনা।"
             দুই দিন আগে ক্লাস এ কপি চেক করছিলাম। আয়েশা এসে বলে,
"Will you scold me if I request you something?"

"No I won't! Tell me what do you want?"

"Will you be my best friend? I don't need them."

"Why not? sure!"

"Hey listen everyone! I don't need anyone because from today ma'am is my best friend!"

আমি ধমক দিয়ে সায়ন্তিকে বলতে পারি -"যাও কথা বল ওর সাথে।" শিক্ষিকা হিসেবে এতটুকু আদেশ করাই  যায় কিন্তু করিনি । এই ক্ষেত্রে জোর করা চলেনা । আমি সায়ন্তিকে বলি, " তোমার ওর সাথে এমনটি করা হয়তো উচিৎ নয় ।" সে বলে,"কিন্তু ম্যাম , ও একেবারে ফালতু । ফালতু কথা বলে , ফালতু কাজ করে ।"
শুনেছি ও বড়ই অভিমানী । ওর মা বলেছিলেন, " একদিন রাত্রে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পার্ক বেঞ্চে শুয়ে ছিল। কারণ মনে হয়েছিল ওর কেও নেই।"  জানিনা কেন মনে হয় ও ভাবছে সবার থেকে ও পিছিয়ে যাচ্ছে। আজকাল একেবারে পাল্টে গেছে। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীটা ই ওকে পাল্টে দিয়েছে। জানলার ধারে একা দাঁড়িয়ে থাকে। কিংবা আমার পাশে বসে আমার কাঁধের ওপর মাথা দিয়ে থাকে। আমাকে বলে, "তুমি কিন্তু সায়ন্তিকে কিছু বলবেনা। ওর দয়ার আমার প্রয়োজন নেই। ও এখনও জানেনা, ভবিষ্যতে প্রতিটি মুহূর্তে  হাজার হাজার "সোমদত্তা" ওর জন্য অপেক্ষা করছে।

ওর সাথে আরও একজনের মিল খুঁজে পাই। পুরোপুরি না হলেও বেশ অনেকটাই । এক অতি সাধারণ মেয়ের। যে বিদেশে থাকেনা। থাকে একটা ছোট্ট শহরে। যার কোন "বিদিশি" ডিগ্রী নেই। যার আয়েশার মতই কোন মূল্য নেই। এই নতুন বন্ধুর মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেলাম। আমরা দুই জনেই ভীষণ
                                                                
                               "ফালতু!"






No comments:

Post a Comment